বাম্পার ফলনেও ধানের দাম কম, কৃষকের মাথায় হাত
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় বোরো ধান কাটা শুরু করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু সেই আনন্দে ভাটা পড়েছে বাজারের ধানের দামে। বাজারে ধানের যে দাম তাতে লাভতো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, চলতি বাজারে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা। প্রতি মন ধান বিক্রি করতে সাথে আরও ৪–৫ কেজি বেশি ধান বাড়তি দিতে হচ্ছে তাদের। এতো পরিশ্রম করে ধান উৎপাদন করে বিক্রি করতে গিয়েও হয়রানির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। অথচ সরকারি ভাবে শুকনো ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০ টাকা।
সরেজমিনে ধানের বাজারে গিয়ে ও কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, গুদামে ধান নিয়ে গেলে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয় কৃষকদের। প্রথমেই ধানের নমুনা নিয়ে আদ্রতা পরিক্ষা করতে হয়। এরপর একই জায়গায় শুকানো ধান গুলো নিয়ে যাওয়ার পর গুদামের দায়িত্বে থাকা লোকেরা বলে উপরের বস্তার ধান গুলো ভাল নিচের গুলো ভিজা ইত্যাদি নানা অজুহাতে হয়রানি করে।
উপজেলা সদরের বাজারের বিভিন্ন ধান ক্রতাদের দোকানে (ধানের গদি) ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক মজনু মিয়া, ইসলাম উদ্দিন, কার্তিক দাস, লালচান মিয়া বলেন, ৯০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করছি প্রতি মণ ধানে ৫ কেজি ধান বেশি দিতে হচ্ছে। বাজারে ধানের এই দামে হতাশ আমরা। গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ধানের দাম কম হলে আমরা বাঁচমু কী করে?
তারা আরও বলেন, ধান বিক্রি করতে পাইকার পাই না, বাকিতে বিক্রি করতে হয়। দামটাও ভালো না, ধান কাটতেও বাড়তি খরচ, জানি না এবার কপালে কী আছে আমাদের? ন্যায্য দামটুকুও না পেলে আমাদের মতো গরীব কৃষকদের এবারও ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ দেলোয়ার হোসেন জনান, কৃষি অফিস থেকে এই পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ কৃষকের তালিকা এসেছে। তারা গুদামে ধান দেবে বলে আবেদন করেছেন। বারহাট্টা উপজেলায় ২টি খাদ্য গুদামে ১ হাজার ৮৯ মেট্রিকটন ধান ও ৬ হাজার ৬৭২ মেট্রিকটন চাল কেনা হবে। তিনি বলেন, আমি গত কয়েকদিন আগে কৃষকদের উদ্দেশ্যে মাইকিং করেছি এর পরও এই পর্যন্ত মাত্র ১ টন ধান কিনতে পেরেছি।
বারহাট্টা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, আমার কাছে এই পর্যন্ত উপজেলার সাত ইউনিয়ন থেকে ৫৬১ জন কৃষকের তালিকা পৌছেছে। গত মাসের ২৭ তারিখ আনুষ্ঠানিক ভাবে ধান, চাল সংগ্রহের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। এই পর্যন্ত আসমা ইউনিয়নের গুমুরিয়া গ্রামের মোস্তফা নামের একজন কৃষকের কাছ থেকে ১ টন ধান কেনা হয়েছে। এছাড়া অন্য কোন কৃষক এখনও আসেনি। গুদামে ধান দিতে হলে ১৪% এর উপরে ময়েশ্চারাইজার হলে নেয়া যায় না। তাই হয়তো কৃষকের অনিহা। কিন্তু এই পর্যন্ত ১৬৮ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করেছে বলে জানিয়েছে তিনি।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, আমাদের অফিসে আর্দ্রতা পরিক্ষা করার মেশিন আছে। প্রথমেই যদি কৃষক আমার এখানে অল্প ধানের নমুনা নিয়ে আসে তাহলেই সহজে পরিক্ষা করতে পারে। ১৪% ময়েশ্চারাইজার থাকলে হয়রানি করার সুযোগ নেই।
এখন পর্যন্ত ক’জন কৃষক আবেদন করেছে ও এখনও আবেদনের সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বারহাট্টা উপজেলা প্রায় ৩৪ হাজার কৃষক রয়েছে। তার মধ্যে এই পর্যন্ত আমার এখানে ১ হাজার ৬১৬ জন কৃষক গুদামে ধান দেয়ার জন্য আবেদন করেছে। আবেদনের তালিকাটি ইতিমধ্যেই আমি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি। এখনও আবেদন করার সুযোগ আছে বলে জানান তিনি।



আপনার মতামত লিখুন