এলজিইডি’র সড়ক প্রশস্তকরণে উন্নয়নের ছোয়ায় বদলে যাচ্ছে চাঁদপুরের রাস্তাঘাট

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী-চাঁদপুর
প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ । ৮:২৪ অপরাহ্ণ
আগামীতে সকল গ্রামীণ হাট-বাজার পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হবে
……..চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আহসান কবির
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকৌশল সংস্থা। ৬০ এর দশকে পল্লীপূর্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও সময়ের পরিক্রমায় এর পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের সীমানায় রয়েছে এলজিইডির বিশাল কর্মযজ্ঞ। পল্লি অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ এবং হাট-বাজার ও গ্রোথ সেন্টার উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করতে এলজিইডি যে অবদান রেখেছে তা আজ দৃশ্যমান। দেশের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অর্জনে এসব অবকাঠামোর অবদান অপরিসীম। প্রত্যন্ত পল্লির মানুষ আজ সর্বোচ্চ দুই কিলোমিটারের মধ্যে পাকা সড়ক ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে পল্লির এসব অবকাঠামো ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি এলজিইডি শহর ও নগর অঞ্চলেও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। নগর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে (পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন) কারিগরি সহায়তা প্রদান ও এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যবস্থা ও দক্ষতা উন্নয়নেও এলজিইডি সম্পৃক্ত। দেশের কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতেও এলজিইডি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে সারাদেশে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে। এসব প্রকল্পে স্থানীয় অংশীজনদের অংশগ্রহণে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে গ্রামীণ ও নগর অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি এসব অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি সহায়তা প্রদান এলজিইডির কর্মতালিকার অংশ। একইসঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে এলজিইডি। উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে অবকাঠামোর তথ্যভান্ডার, মানচিত্র, কারিগরি বিনির্দেশ, ম্যানুয়াল ইত্যাদি প্রণয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি ও কর্মদক্ষতা বাড়াতে সংস্থার নিজস্ব কর্মকর্তা/কর্মচারী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীজনদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এলজিইডি।

এলজিইডি চাঁদপুরের কমিউনিটি ওরগানাইজার’ রফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) কর্তৃক চাঁদপুর জেলার একাধিক উপজেলায় ২০২৪’ ২৫ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালী করন প্রকল্পের আওতায় ৭১ কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার ১৭১ টাকার টাকা ব্যায়ে
রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজ চলমান রয়েছে।
চলমান রাস্তাগুলো হলো, মতলব উত্তর উপজেলার ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে চেংগারচর জিসি, কালিবাজার জিসি সড়ক, ১৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যায়ে ছেংগারচর জিসি- একলাসপুর জিসি সড়ক,
শাহারাস্তি উপজেলায় ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা
ব্যায়ে উপজেলা হেডকোয়ার্টার শিবপুর আরএন এইচডি সড়ক, কচুয়া উপজেলায় ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যায়ে রহিমনগর নবাবপুর রোড।

এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল
অধিদপ্তর (এলজিইডি) চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আহসান কবির এর সাথে। তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে গ্রামীণ, নগর ও ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য এলজিইডি কাজ করছে। চাঁদপুরের চলমান সড়ক উন্নয়নের ফলে ক্রমশ বদলে যাচ্ছে জেলার দৃশ্যপট। জেলার ৮টি উপজেলায় সড়ক সংস্কার, প্রশস্তকরন ও রক্ষণাবেক্ষণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। এর ফলে রাজধানী ঢাকাসহ জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হতে চলছে।

তিনি আরও বলেন, আগামীতে দেশের গ্রামসমূহে নাগরিক সুবিধা আরও সম্প্রসারণ করা হবে। দেশের গ্রামসমূহের প্রাকৃতিক সবুজ পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে, শহরের সাথে যোগাযোগ সহজতর এবং গতিশীল করা হবে। হাটবাজার, ইউনিয়ন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কসমূহ সম্প্রসারিত করে ডাবল লেন করা হবে। শহরের সাথে গ্রামের সংযোগ সড়কসমূহ যানজটমুক্ত ও প্রশস্ত করা হবে। এতে মানুষ গ্রামে থেকে সহজেই শহরে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। গ্রামের নদীসমূহের নাব্য অক্ষুণ্ণ রেখে প্রয়োজনীয় সেতু/কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। কোনো গ্রাম সেতুর অভাবে পশ্চাৎপদ থাকবে না। বিদ্যালয়গামী কোনো শিশুকে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হতে হবে না।

গ্রামীণ নৌপথসমূহ খনন করে সচল করা হবে। এতে কৃষিপণ্যের পরিবহন ব্যয় কমে আসবে। সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথও ব্যবহার করা যাবে। এ সকল নৌপথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ঘাটও নির্মাণ করা হবে। পল্লী অঞ্চলের খালগুলো খনন করে সচল নদী প্রবাহের সাথে যুক্ত করা হবে।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, সকল গ্রামীণ হাট-বাজার পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হবে। ব্যস্ত এবং বর্ধনশীল বাজারগুলোতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। হাট-বাজারগুলোতে পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সুপরিসর সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হবে যাতে দুর্যোগকালীন মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু এবং অন্যান্য সম্পদেরও স্থান সংকুলান হয়।

দেশের শহরগুলো উন্নত বিশ্বের আধুনিক শহরের আদলে গড়ে তোলা হবে। নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত পার্ক, শিশুদের খেলার মাঠ, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ, যানজট দূরীকরণে প্রশস্ত সড়কসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। নগরগুলোর সেবা প্রদানের সক্ষমতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। এভাবেই ক্রমশ উন্নত দেশের পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গত: কামরুল ইসলাম সিদ্দিক একজন বাংলাদেশী প্রকৌশলী এবং নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদ। তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামোর রূপকার হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাংক কামরুল ইসলাম সিদ্দিককে ১৯৯৯ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল রোড ফেডারেশন’ কর্তৃক বর্ষসেরা ব্যক্তি ঘোষণা করেন। ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে ওয়ার্কস প্রোগ্রাম উইং রাজস্ব বাজেটের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো (এলজিইবি) রূপে পুনর্গঠিত হয়। ১৯৯২ সালের আগস্ট মাসে এলজিইবিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) হিসেবে উন্নীত করা হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রাসেল মিয়া

প্রিন্ট করুন