
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর ঢাকা-চট্টগ্রামের পুরাতন মহাসড়ক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পথরোধ করার চেষ্টা করেছিল ফেনীর মুক্তিকামী জনতা। সেদিন ফেনীর ফতেহপুর এলাকায় মহাসড়কে গাছ ফেলে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট হতে চট্টগ্রামে যেতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এরপর খুলে ফেলা হয় ছাগলনাইয়ার চাঁনপুর কাঠের পোলের পাটাতন।
২৬ মার্চ মুক্তিকামী জনতার প্রতিরোধের তথ্য মেলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে। এ প্রসঙ্গে ফেনীর প্রয়াত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম এক সাক্ষাৎকারে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ জানিয়েছিলেন, সংগ্রাম পরিষদের কাছে তথ্য ছিল পাকিস্তানি আর্মির একটি দল কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট হতে চট্টগ্রাম যাবে। সেদিন সন্ধ্যা থেকে ছাত্র জনতা পুরাতন ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে ছাগলনাইয়ার চাঁনপুর কাঠের পোলের পাটাতন খুলে ফেলে। তৎকালীন ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের শক্তিশালী সংগঠক খাজা আহমদের নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রবীন সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের জানান, খাজা আহমদের নির্দেশে আরও আগ থেকেই অবরোধ চলছিল। মহাসড়কে গাছ ফেলে পাকবাহিনীর চলাচলে অবরোধ তৈরির চেষ্টা করা হয়। এ পরিকল্পনা করেছিলেন খাজা আহমদ। কিন্তু আমরা গাছ কেটে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেও পাকবাহিনী তা সরিয়ে চট্টগ্রামের দিকে রওনা হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রয়াত আবদুর রহমান বিকম জানিয়েছিলেন, ছাগলনাইয়ার চাঁনপুর পোলের পাটাতন খুলে নিলেও পাকিস্তানি আর্মিরা বিশেষ নেট ব্যবহার করে পোল পার হয়ে চট্টগ্রামের দিকে রওনা দেয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব জানান, পাকিস্তানি আর্মি সেদিন চলার পথে চৌদ্দগ্রাম হতে বিভিন্ন লোকালয়ে আগুন দেয় এবং নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে ফেনী অঞ্চলেও হতাহতের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ফেনীর সিও অফিসে তাদের একটি দল ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের সাথে ২৭-২৮ মার্চ ফেনীতে প্রতিরোধে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে অংশ নেন ছাত্র-জনতা, পুলিশ, ইপিআরের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ও মুক্তিমন্ত্রে উদ্দীপ্ত বাঙালি সৈনিকরা।