ঈদকে ঘিরে সক্রিয় সাইবার প্রতারক চক্র ফেনীতে বেড়েছে তৎপরতা

মোঃ আবদুল রহিম, ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশের সময়: রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫ । ৬:৩৭ অপরাহ্ণ
ফেনীতে ঈদকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাইবার প্রতারক চক্র। গত শুক্রবার (২১ মার্চ) একদিনে সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে পরিচিতদের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগ
 পাওয়া গেছে ভুক্তভোগীরা জানায়, প্রতারকরা প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে একটি লিংক পাঠায়, যা ক্লিক করলেই তাদের অ্যাকাউন্ট চক্রটির নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এরপর তারা ওই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের পরিচিতদের কাছে জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে একটি বার্তা দিয়ে টাকা চায়। বার্তাটিতে উল্লেখ করে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছিল ২০-৩৫ হাজার টাকা পাঠান’। ভুক্তভোগী শাহীন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ একরামুল হক দৈনিক প্রতিদিনের কাগজকে  বলেন, আমার কাছে একজন পুলিশের ওসি পরিচয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কল দিয়ে একটি লিংকে জলদি প্রবেশ করতে বলে। লিংক আসার পর সেটিতে ক্লিক করার পর আমার হোয়াটসঅ্যাপ আমার নিয়ন্ত্রণ থেকে তাদের কাছে চলে যায়। আমার অ্যাকাউন্ট তাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমার সাথে যারা হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত তাদের কাছে একটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে টাকা চায়। একই ঘটনার শিকার হন সাংবাদিক এনামুল হক পাটোয়ারী। এ ঘটনার পর তিনি ‘আমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটা হ্যাক হয়েছে দয়া করে কেউ যোগাযেগ করবেন না।’ লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এদিকে, আরেকটি চক্র মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে টাকা হাতানোর চেষ্টা করছে বলে আরো একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, আমাকে আত্মীয় পরিচয়ে একটি মেসেজ পাঠানো হয়, যেখানে উল্লেখ ছিল ‘আমাদের পরিবারে কিছুদিন ধরে আর্থিক সংকট চলছে, অভাব যাচ্ছে না। রমজান মাস চলছে, বাজার করার মতো টাকা নেই। যদি সম্ভব হয়, ফিতরা, যাকাত বা দান-সদকা হিসেবে কিছু টাকা পাঠান, খুব উপকার হবে। মেসেজের সঙ্গে একটি বিকাশ ও নগদ নম্বরও দেওয়া হয়। কিন্তু পরে জানা যায় একই বার্তা আমিসহ অনেকের কাছেই পাঠানো হয়েছে। পরে বুঝতে পারি এটি একধরনের প্রতারণা।
একই ঘটনার শিকার হয়েছেন সাবরিনা নামের আরেক ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, কাছের আত্মীয়
ফেনীতে বেড়েছে তৎপরতা
ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ফেনীতে সাইবার প্রতারক চক্রের সক্রিয়তা বেড়েছে। একইদিনে সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকের হোয়াইটসঅ্যাপ হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে একটি চক্র। এছাড়া ‘কাছের আত্মীয়’ সেজে মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়ে সাহায্য-সহযোগিতার নামে অর্থ চাওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে
পরিচয়ে আমার কাছে টাকা চাওয়ার একটি বার্তা আসে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমি ওই নাম্বারে কল করি, তবে কোনো সাড়া পাইনি। নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সাইবার সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাইদুর রহমান রায়হান বলেন, বর্তমান সময়ে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার কয়েকটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে। হ্যাকাররা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ৬ সংখ্যার যাচাইকরণ কোড সংগ্রহ করে প্রতারণার মাধ্যমে নতুন ডিভাইসে অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করতে পারে। এছাড়া, ব্যক্তিগত ডিভাইসে স্পাইওয়্যার ইনস্টল করে হোয়াটসঅ্যাপের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে হ্যাকাররা ম্যালওয়‍্যারযুক্ত লিঙ্ক পাঠিয়ে
ব্যবহারকারীর ডিভাইসে অননুমোদিত প্রবেশ করে থাকে। অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপের পরিবর্তে তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ব্যবহারের কারণেও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ে। নিরাপদ থাকতে অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক না করা, অফিসিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করা, টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখা এবং যাচাইকরণ কোড কাউকে না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এ ব্যাপারে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নোবেল চাকমা দৈনিক প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট। সাধারণ জনগণকে অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং কোনো সন্দেহজনক কার্যক্রম দেখলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহি-নীর সহযোগিতা নিতে হবে। এ বিষয়ে ফেনী পুলিশের সাইবার ইউনিট কাজ করবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রাসেল মিয়া

প্রিন্ট করুন