ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ লোকাল ট্রেন বন্ধ, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা

ইঞ্জিন সংকটের অজুহাতে ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রুটের লোকাল ট্রেনটি প্রায় চার মাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ ওই রুটে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, লোকাল ট্রেনটি প্রতিদিন ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জ সকাল-বিকাল দুইবার আসা যাওয়া করতো। ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে পণ্য বহনকারী বগি ও যাত্রীবাহী ৫টি বগি নিয়ে লোকাল ট্রেনটি ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে মোহনগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসতো। পরে সকাল সাড়ে নয়টায় মোহনগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যেতো। পরবর্তীতে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ওই ট্রেনটি ফের মোহনগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসতো। কিন্তু গত বছরের ৯ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনটি আসা-যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কবে থেকে ট্রেনটি চলাচল করবে তাও নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে নেত্রকোনা জেলা শহরসহ আশপাশের উপজেলার ট্রেন যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী এ ট্রেনে যাতায়াত করতো।
তারা আরও জানান, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর থেকে ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রুটে চলাচলকারী লোকাল ট্রেনটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। লোকাল ট্রেনের বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন নষ্ট থাকার কারণে সেগুলো মেরামত করার জন্য চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। ফলে ইঞ্জিন সংকটের কারণে ট্রেনটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রুটে একটি কমিউটার ও দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চললেও তা সব স্টেশনে দাঁড়ায় না এবং ভাড়াও তিনগুণ বেশি। ইঞ্জিন এবং জনবল সংকটের অজুহাতে লোকাল ট্রেনগুলো দুই মাস আগে বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় ঈদযাত্রায়ও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
বন্ধ থাকা লোকাল ট্রেনটি চালুর দাবিতে গত (২১ মার্চ) শুক্রবার ময়মনসিংহ, (২৬ মার্চ) বুধবার মোহনগঞ্জ ও (২৮ মার্চ) শুক্রবার বারহাট্টা রেলস্টেশনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতীকী রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, কোন একটা পক্ষকে লাভবান করতেই ষড়যন্ত্র করে ইঞ্জিন সংকটের বাহানায় লোকাল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এই চড়ে জেলা শহরে গিয়ে পড়াশোনা করে। রোগীরা সেবার জন্য শহরে যান এই । ব্যবসায়ীরা কম খরচে নিরাপদে পণ্য পরিবহন করেন, চাকরিজীবীরা নির্বিঘ্নে যাতায়ত করেন লোকাল এই ট্রেনে। বৃটিশ আমল থেকেই এই ট্রেন সাধারণ মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনটি বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত খরচ দিয়ে বাস, অটোরিকশা ও সিএনজিতে যাতায়াত করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ইঞ্জিন সংকটের টালবাহানা বাদ দিয়ে দ্রুত টেনটি চালু করার দাবি জানান তারা। অন্যথায় এই রুটে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেন তারা।
যাত্রীদের অভিযোগ- বাস মালিকদের সাথে যোগসাজশে বাসে যাত্রী বৃদ্ধির জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ইঞ্জিন সংকটের নাটক সাজিয়ে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ রেখেছে।
তারা আরও বলেন, লোকাল ট্রেনগুলো প্রতিটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করার ফলে সেসব এলাকার মানুষজন খুব সহজেই ট্রেনে চড়ে গন্তব্যে যেতে পারতেন। স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন পণ্য পরিবহনও করতে পারতেন। ব্যবসায়ী ও পাইকাররা দুধ, ডিম, কলা, মুরগি, শাকসবজি, শুঁটকিসহ বিভিন্ন কৃষিজ পণ্যের পাশাপাশি কাপড়, জুতা, কসমেটিক্স, বাঁশের চাটাইসহ নানা মনিহারি পণ্য পরিবহন করে বিভিন্ন বাজারে তা সরবরাহ করতেন। ট্রেনের বদলে সড়কপথে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বিকল্প হিসেবে দুইটি আন্তঃনগর এবং একটি কমিউটার ট্রেনে বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে বাসে বা সিএনজিতে চড়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। অন্যদিকে জ্যামে পড়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। এছাড়া মালামাল পরিবহনেও ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। তবে ট্রেন বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা।
নেত্রকোনা সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন রহমান, রাজিব হোসেন, মৌমিতা জাহান, বিনা আক্তারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের কয়েকজন মোহনগঞ্জ থেকে কয়েকজন বারহাট্টা থেকে নেত্রকোনায় কলেজে যাই।লোকাল ট্রেনে কম ভাড়া দিয়ে কলেজে যাতায়াত করতে পারতাম। কিন্তু এখন লোকাল ট্রেনটি বন্ধ থাকায় বিপদে পড়েছি। এখন বাস অটোরিকশা ও সিএনজিতে চড়ে অনেক টাকা ব্যয় করেও জ্যামের কারণে কলেজে যেতে কষ্ট হচ্ছে। আমার মতো শত শত ছাত্র-ছাত্রী এই ট্রেনে চড়ে কলেজে যাতায়াত করে। ট্রেন বন্ধ এখন তারাও আমাদের মতো বিপদে। দ্রুত ট্রেনটি চালু করা হোক এটাই দাবি।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা রেলওয়ে স্টেশনের (বড় স্টেশন) স্টেশন মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,, লোকাল ট্রেন টির যাবতীয় বগী ধৌত করে রাখা আছে। ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এতোদিন ট্রেন টি বন্ধ ছিলো। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই ট্রেন টি চালু হবে। লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা টিকিট না করার কারলে কি ট্রেন বন্ধ করে রেখেছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, না এটা সঠিক নয়। সরকার লোকাল ট্রেনের ভাড়া একদম সীমিত করে রেখেছে। এমন কিছু শুনে থাকলে এটা গুজব।
আপনার মতামত লিখুন