নেত্রকোনায় ৩ সাংবাদিকের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি বিএনপি নেতার

সংবাদ প্রকাশের জেরে নেত্রকোনার মদনে ৩ সাংবাদিকের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মদন পৌর বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান চন্দনের বিরুদ্ধে।
গত শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে প্রকাশ্যে তিনি এই হুমকি দেন। তাঁর বক্তব্যের ভিডিওটি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার সৃষ্টি হয়েছে।
হুমকির শিকার সাংবাদিকরা হলেন- কালের কণ্ঠ পত্রিকার নেত্রকোনা আঞ্চলিক প্রতিনিধি ও মদন উপজেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ (হৃদয়), আমার দেশ পত্রিকার মদন উপজেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের সাহিত্য প্রচার সম্পাদক নিজাম উদ্দিন এবং যুগান্তর পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের সদস্য তোফাজ্জল হোসেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি মদন পৌরসভায় মদন-কেন্দুয়া সড়কের একটি অংশে পরপর দুইবার সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারকাজ হয়েছে। প্রথমে এলজিইডি প্রায় ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ কিলোমিটার ৩৭০ মিটার সড়ক নির্মাণ করে। এরপর মদন পৌরসভার উদ্যোগে আইইউজিআইপি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে একই সড়কের প্রায় ১২০০ মিটার অংশ নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, দ্বিতীয় দফা নির্মাণকাজ নির্ধারিত মান ঠিক না রেখেই সম্প্রতি শেষ করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ প্রকাশ করলে ঠিকাদারসহ স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী ক্ষিপ্ত হন।
ঘটনার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার ঠিকাদারের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল রোমান তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর শুক্রবার বিকেলে পৌরসভার দেওয়ানবাজার রোড এলাকায় ‘মদন পৌরবাসীর’ ব্যানারে একটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই মদন পৌর বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান চন্দন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন। তাঁর প্রায় দেড় মিনিটের বক্তব্যে তিনি ওই তিন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে আর যদি এটা নিয়ে কিছু করা হয়, প্রয়োজনে হাত কেটে দেওয়া হবে, হাত।’ এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা মানববন্ধনকারীরা হাততালি দিয়ে স্লোগান দেন।
হুমকির শিকার সাংবাদিকেরা বলছেন, অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং প্রকাশ্যে হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় তাঁরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও আমার দেশ পত্রিকার নেত্রকোনা প্রতিনিধি মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এভাবে মানববন্ধন করে একজন বিএনপির নেতা প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিতে পারেন না। আশা করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি দেখবে। একই সঙ্গে সড়কের দুর্নীতির ঘটনাটি দুদককে তদন্ত করার আহ্বান জানাই।’
হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান চন্দন গতকাল শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে মোবাইলে বলেন, ‘রাস্তার কাজ হচ্ছিল: সেখানে গিয়ে সাংবাদিকেরা নাকি টাকা চেয়েছিল শুনেছি। নিউজ করায় অনেক মানুষ খেপে গিয়েছিল। যদি পৌরসভার চলমান প্রকল্পগুলো বাতিল হয়ে যায় তবে তো সমস্যা। তাই মানুষের রাগ প্রশমিত করার জন্য আমি বক্তব্য দিতে গিয়ে হাত কেটে নেওয়ার বক্তব্যটি চলে এসেছে। এলাকার মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে এভাবে বলতে হয়েছে। এটা আমি রাগ বা মন থেকে বলিনি। ওরা (সাংবাদিকরা) আমার ছোট ভাই। এখন বুঝতে পেরেছি এতটা বলা ঠিক হয়নি। আপনারা বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান করবেন আশা করি।’
এ বিষয়ে মদন পৌরসভার প্রশাসক ও ইউএনও মো. অলিদুজ্জামান বলেন, ‘এলজিইডি সড়কটি নির্মাণের সময় পৌরসভার লিখিত অনুমতি নেয়নি। সড়কটি নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় লোকজন নিয়ে একাধিক মিটিং করেছি। সবার মতামতের ভিত্তিতে কাজ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।
আপনার মতামত লিখুন