খুঁজুন
সোমবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেনীর সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে জনসাধারণের অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে

মোঃ আবদুল রহিম, ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:২৯ অপরাহ্ণ
ফেনীর সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে জনসাধারণের অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে
ফেনীর সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে জনসাধারণের অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। অবকাঠামো, জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটের কারণে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সের ঘাটতির পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবও সেবার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি মাত্র ১৫০ শয্যার জনবল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৮০০-১২০০ রোগী এবং ওয়ার্ডে ভর্তি ৬০০ রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ৩০৬টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২০৬ জন। ৯ জন সিনিয়র কনসালটেন্টের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৫ জন, ১২ জন জুনিয়র কনসালটেন্টের স্থলে আছেন ৬ জন। দীর্ঘদিন ধরে মেডিসিন, শিশু, রেডিওলজি, প্যাথলজি, সার্জারি, দন্ত, চক্ষু, চর্ম ও যৌন রোগে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। শিশু বিভাগেও রয়েছে মারাত্মক সংকট। বিশেষায়িত সেবা বিভাগগুলোর মধ্যে ডায়ালাইসিস, আইসিইউ, সিসিইউ, স্ক্যানু এবং থেরাপি বিভাগে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়নি। ১৫৩টি সেবিকা পদের মধ্যে ৩২টি পদ শূন্য, ৪২টি অফিস সহায়কের মধ্যে শূন্য ১৬টি এবং ৭৩টি ৪র্থ শ্রেণির পদের বিপরীতে মাত্র ১৬ জন কর্মরত।
সংকটে জরুরি সেবা বিভাগ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে রোগীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ৭ জন চিকিৎসক। প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগীর চাপ থাকায় যথাযথ চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে রোগীর অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা। মাত্র ৭ জন মেডিকেল অফিসার প্রতিদিন প্রায় সহস্রাধিক রোগীকে সেবা প্রদান করছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে রোগীদের দীর্ঘ সারি থাকলেও ওয়ার্ডে রাউন্ডের কারণে তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
হাসপাতাল ঘুরে আরও দেখা যায়, হাসপাতালের নতুন (৬ তলা) ভবনে ওঠানামার জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করতে হচ্ছে রোগীদের, কারণ সেখানে থাকা দুটি লিফটের মধ্যে একটি স্থাপনই করা হয়নি, এবং অন্যটি ৩-৪ বছর ধরে বিকল। মাঝে মাঝে সংস্কার করা হলেও বছরের বেশিরভাগ সময় এটি অকেজো থাকে। ফলে রোগীদের চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নিচতলায় প্যাথলজি, টিকিট কাউন্টার, এক্সরে, আলট্রাসোনোগ্রাফি রুম ও চিকিৎসকদের রুম অবস্থিত। দ্বিতীয় তলায় আইসিইউ ও অপারেশন থিয়েটার এবং তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় সার্জারি ও অর্থোপেডিক বিভাগ রয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় নতুন ওয়ার্ড স্থাপন করা হলেও লিফটের অভাবে সেগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রফিকুল ইসলাম নামের এক রোগী দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ প্রতিবেদক বলেন চিকিৎসা সেবা নিতে এসে আমি খুবই সমস্যায় আছি। ইমারজেন্সি ডাক্তার দেখাতে হবে, কিন্তু সিরিয়াল অনেক বড়। আমি অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি কিন্তু এত রোগী দেখে ডাক্তারদের পক্ষে সবার সঠিক চিকিৎসা দেওয়া খুব কঠিন।
ছমির ভূঞা নামের আরেক রোগী দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের প্রতিবেদককে বলেন, প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার মতো সে সামর্থ্য আমার নেই, তাই সরকারি হাসপাতালে এসেছি সেবা নিতে। কিন্তু এখানে এসে ঠিকমতো সেবা পাচ্ছি না। রোগীদের সংখ্যা অনেক, কিন্তু চিকিৎসক ও সুবিধার অভাব। সরকারের উচিত আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য সেবা সুবিধাগুলো উন্নত করা, যাতে আমরা ভালো চিকিৎসা পেতে পারি।
মোসাম্মাৎ রেহানা নামের আরেক রোগী দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের প্রতিবেদককে বলেন, জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসে দেখলাম একজন ডাক্তারকে কয়েকশ রোগী দেখতে হচ্ছে। এত ভিড়ে ঠিকমতো সেবা পাওয়া যায় না। আর নার্সরাও খুব ব্যস্ত, তবুও আমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেন
বাবুল চন্দ্র ভৌমিক নামের এক রোগীর দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ প্রতিবেদকে বলেনা, এতবড় সরকারি হাসপাতাল অথচ এখানে লিফট নাই। নামমাত্র একটা লিফট থাকলেও এটি চলতে দেখিনা কখনও। আঘাতপ্রাপ্ত ও অপারেশনের অনেক রোগী এ ভবনের ৩য় ও ৪র্থ তলায় থাকেন। সিঁড়ি বেয়ে নামা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য।
এ প্রসঙ্গে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের প্রতিবাদকে বলেন, হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ২৫০ হলেও বর্তমানে এটি ১৫০ শয্যার জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে ৫৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছেন মাত্র ৪৩ জন, আর ৩২ জন সেবিকার অভাব রয়েছে। অফিস সহায়ক পদেও ঘাটতি রয়েছে। চিকিৎসক সংকট পূরণ করতে সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল থেকে অ্যাটাচমেন্ট (প্রেষণ) ডাক্তার আনা হলেও তাদের বেশি দিন রাখা সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের সর্বাধিক সমস্যা হচ্ছে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগে। গত ১০ বছর ধরে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিছু কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলেও গত ৮ মাস তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে, যার ফলে তারা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে এবং কাজ বন্ধ করে দেয়
তিনি আরও উল্লেখ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের একমাত্র লিফটটি নষ্ট হয়ে গেছে, যার কারণে রোগীদের ওঠানামা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। লিফটটি মেরামত ও নতুন লিফট স্থাপনের জন্য বারবার আবেদন করেও কোনো সমাধান মেলেনি। অবকাঠামো, জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেলে সেবার মান আরও উন্নত করা সম্ভব হবে। যদিও সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারপরও আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর ফেনী’র নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের প্রতিবাদককে বলেন, হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ না পেলে আমাদের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে যন্ত্রাংশ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুরোনো লিফট সংস্কার ও নতুন লিফট স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। জরুরি বিভাগ প্রশস্তকরণের জন্যও চাহিদা পাঠানো হয়েছে এবং বরাদ্দ পেলে এর উন্নয়ন কার্যক্রমও সম্পন্ন করা হবে।

পিআর পদ্ধতি সহ ৫ দফা দাবিতে গাইবান্ধায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান

শাহ্ পারভেজ সংগ্রাম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৪৬ অপরাহ্ণ
   
পিআর পদ্ধতি সহ ৫ দফা দাবিতে গাইবান্ধায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ও ফেব্রুয়ারিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সহ পাঁচ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছে গাইবান্ধা জেলা শাখা।

‎বিকেলে জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে স্থানীয় পৌর পার্কে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমেদের হাতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
‎জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর আব্দুল করিম সরকারের সভাপতিত্বে স্মারকলিপি পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়ারেছ, মো. মাজেদুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা জহুরুল হক সরকার, নায়েবে আমীর মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবু, সহকারী সেক্রেটারি সৈয়দ রোকনুজ্জামান ও ফয়সাল কবির রানা, পৌর জামায়াতের আমীর মো. ফেরদৌস আলম এবং মাওলানা নুরুল ইসলাম মণ্ডল প্রমুখ।
‎বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে জুলাই সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, সকল দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি ও খুনি-ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
‎তারা আরও বলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার ঘটানো গেলে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে। বক্তারা জনগণের গণদাবি বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করতে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।

গাইবান্ধায় হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত

শাহ্ পারভেজ সংগ্রাম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৪২ অপরাহ্ণ
   
গাইবান্ধায় হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত

গাইবান্ধা সদর উপজেলায় হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বিরসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে গাইবান্ধার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর আলম এই নির্দেশ দেন। মোসাব্বির সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
এবিষয়ে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার হাফিজুর রহমান জানান, আজ রোববার মামলার চার্জশিট শুনানির দিন ধার্য্যে ছিল। মোট ১৬ জন আসামির মধ্যে ১৪ জন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের চারজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তারা হলেন ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বির হোসেন, সুলভ মিয়া খাজা, শাহআলম ও লিটন মিয়া।
এর আগে চেয়ারম্যান মোসাব্বির ২০২১ সালে উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। তবে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফেরদৌস ওয়াহিদ তাঁকে প্রথম দফায় কারাগারে পাঠান।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৭ জুন গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বালুয়া বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাইকেল পার্টস ব্যবসায়ী রোকন সরদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় ইউপি সদস্য আশিকুজ্জামান ও জিল্লুর রহমান আহত হন। নিহত রোকন সরদার ওই ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামের আবদুর রউফ সরদারের ছেলে।
ঘটনার পর নিহতের ভাই রোমান সরদার বাদী হয়ে চেয়ারম্যান মোসাব্বিরসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০–১২ জনকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জনবল সংকটে ব্যাহত চাঁদপুর ডিএনসি’র মাদকবিরোধী কার্যক্রম

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী, চাঁদপুর
প্রকাশিত: রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৪০ অপরাহ্ণ
   
জনবল সংকটে ব্যাহত চাঁদপুর ডিএনসি’র মাদকবিরোধী কার্যক্রম
মাদক একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। নিমিষেই যেকোনো পরিবার মাদকের ছোবলে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

বিশেষত যুব সমাজ এ বিপদের প্রধান শিকার হয়ে পড়ছে। মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে সমাজকে রক্ষা করতে সরকারি সংস্থা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। চাঁদপুর জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মাদক নির্মূলে। তবে জনবল সংকটের কারণে কার্যক্রমে মারাত্মক বেগ পেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় আশানুরূপ ফল মিলবে বলে আশাবাদী কর্মকর্তারা।

পাশাপাশি অভিযানের সময় আত্মরক্ষার্থে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতিও শিগগির পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এর সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান। সম্প্রতি ডিএনসি সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলায় মোট ৮টি উপজেলা রয়েছে। এই ৮ উপজেলাকে একটি অফিস থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে।

বর্তমানে ২৬ জন জনবলের মধ্যে ১৮ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৪ জন কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ২ জন সিনিয়র ইন্সপেক্টর ও ১ জন সাব-ইন্সপেক্টর আছেন, যাঁরা টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু বিভিন্ন জেলায় মামলার সাক্ষ্য প্রদানের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় প্রায় ১২ থেকে ১৫ দিন। এছাড়াও ১টি গাড়ী ও ১ জন চালক দিয়েও পুরো জেলায় অভিযান নিয়ন্ত্রণ করতেও অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে অভিযান পরিচালনার কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এর সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের ইচ্ছা ও সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় দক্ষ ও সাহসী জনবলের অভাবে অভিযান পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে।

এজন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছি। বর্তমান সরকার মাদক নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত আন্তরিক। যদি প্রতি উপজেলায় অন্তত ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি করে কার্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়, তবে মাদক নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হয়ে যাবে।

আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি প্রসঙ্গে মো. মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা অনেক সময় অত্যন্ত দুর্ধর্ষ মাদক কারবারির বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। আত্মরক্ষার্থে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি না থাকায় কিছু সময় বিপদের মুখে পড়তে হয়। এজন্য আত্মরক্ষার স্বার্থে এবং সফল অভিযানের জন্য অনুমতি চেয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে, আশা করছি শিগগিরই অনুমতি পেয়ে যাবো। অন্যদিকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) সূত্রে আরো জানা যায়, গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ছয় মাসে মোট ৭২৫টি অভিযান পরিচালনা করে ৭২টি মামলা দায়ের এবং ৭৪ জন আসামি গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে ৭,৫১৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৮ কেজি ৮৮০ গ্রাম গাঁজা, ২ লাখ ২৩ হাজার ৩০ টাকা নগদ অর্থ, ৮টি মোবাইল ফোন ও মাদক সেবনের বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও মাদকের কুফল ও ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেমন হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা, লেডি দেহলভী, এম এম নুরুল হক, ডি এন, বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা, আইনগিরী উচ্চ বিদ্যালয়, বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, গল্লাক দারুচ্ছুন্নাত আলিম মাদ্রাসা,পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজ এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা, অভিভাবক সমাবেশ, মাদকবিরোধী প্রীতি ফুটবল ম্যাচসহ নানা কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেছেন, আমি জনবল সংকটের ব্যাপারটা অবগত আছি। আসলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এটা একটা বড় সমস্যা।

আমি বিভাগীয় সভা গুলোতেও এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি। এছাড়াও ডিসি সম্মেলনেও এ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করবো। আশাকরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। চাঁদপুর ডিএনসি’র কর্মকর্তারা জানান, জনবল সংকট নিরসন ও পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সরবরাহ পেলে মাদকমুক্ত চাঁদপুর গড়ে তুলতে আরও কার্যকরভাবে কাজ করা সম্ভব হবে।