গাজায় ইসরাইলের চলমান নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ফেনী জেলাজুড়ে চলছে প্রতিবাদ ও সংহতি কর্মসূচি। ফেনী শহর ও সোনাগাজী উপজেলায় পৃথক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, শিক্ষার্থী এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়। ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবী পরিবারের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলটি
বাদ যোহর ফেনী শহরের ঐতিহ্যবাহী জহিরিয়া মসজিদ থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন জাতিসংঘ জবাব চায়’ ‘জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই’ ‘এ জিহাদে জিতবে কারা বিশ্বনবীর সৈনিকেরা’, ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়, ফিলিস্তিন স্বাধীন করো, ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর’, ‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিশ্ব বিবেক আজ নিশ্চুপ। কোথায় মানবাধিকার?
গাজায় চলমান নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ ও হামলার প্রতিবাদে ফেনী জেলাজুড়ে চলছে প্রতিবাদ ও সংহতি কর্মসূচি। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, শিক্ষার্থী এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী পালিত ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়েছে ফেনীর শিক্ষার্থীরা।
আমাদের শক্তি সঞ্চয় করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সমস্ত মুসলমান ভাই ভাই ও একটি দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ যদি ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে শারীরিক ক্রিয়া যেমন ব্যাহত হয়, ঠিক তেমনি একজন মুসলিম ভালো না থাকলে অন্যরাও ভালো থাকতে পারে না। মুসলিম হিসেবে আমাদের লজ্জা অনুভব হয় যে, আমরা এখনও এই অসহ্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে পারছি না। আমরা ভুলে যেতে বসেছি মুসলমানদের পুরনো ঐতিহ্য।
ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবী পরিবারের প্রতিনিধি ওসমান গনি রাসেল বলেন, আজ ফিলিস্তিনের মাটিতে যে নির্মম গণহত্যা চলছে, তা কেবল ফিলিস্তিনিদের উপর আঘাত নয়, বরং এটি সমগ্র মুসলিম উম্মাহর উপর একটি চরম অবমাননা। শিশু, নারী, নিরীহ মানুষদের রক্তে আজ রঞ্জিত গাজা। অথচ বিশ্ব বিবেক চুপ করে আছে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা সবাই আজ নিশ্চুপ। ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবী পরিবারের আরেক প্রতিনিধি নুর নবী হাসান বলেন, জাতিসংঘ আজ নির্বিকার। তারা মুখে শান্তির কথা বললেও কাজে নিষ্ক্রিয়। আর মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন একটি রাষ্ট্রও দৃশ্যমান ভূমিকা নিচ্ছে না। এই নীরবতা একধরনের অপরাধ। আজ যদি আমরা চুপ থাকি, তবে কাল ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। আমরা বিশ্বাস করি, যদি মুসলিমরা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে ওই জালিম শত্রুরা পালানোরও জায়গা পাবে না।
জেলা স্বেচ্ছাসেবী পরিবারের প্রতিনিধি ওসমান গনি রাসেলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবী ওমর বিন কাসেম সিফাত, খন্দকার সুমন, বিশিষ্ট সংগঠক আজিজ উল্যাহ আহমদী, কবি ও সংগঠক স্বাধীন মুরশিদ। এতে উপস্থিত ছিলেন নিশাদ আদনান, পিয়াস, জাহাঙ্গীর সহ স্বেচ্ছাসেবী পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
একইদিন বিকেলে সোনাগাজী উপজেলায় সোনাগাজী স্বেচ্ছাসেবী পরিবারের ব্যানারে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সোনাগাজী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদে আসরের নামাজ শেষে মিছিলটি শুরু হয়ে পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়।
এ সময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সোনাগাজী ব্লাড ডোনেট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াছিন মাহমুদ, সোনাগাজী স্বেচ্ছায় রক্তদান ফাউন্ডেশনের সভাপতি আলমগীর হোসেন, স্বপ্নচারী মানব কল্যাণ সংস্থার সহ সভাপতি জিয়া উদ্দিন হৃদয়, মানবতার ডাক’র সহসভাপতি এমদাদ হোসেন সুজন, মুনস্টারের আবুল কালাম আজাদ, নিসআর শাহাদাত হোসেন সজিব, ফেনী সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী আবুল কামাল আজাদ।
প্রতিবাদ সমাবেশে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক উপজেলা সভাপতি আব্দুল মোমিন শিক্ষাঘর সোনাগাজীর সভাপতি হোসাইন আজাদ, স্বপ্নসিড়ির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম হাসান, স্বপ্নচারীর সভাপতি নাজমুল ইসলাম,
শিক্ষা ঘরের শিবলু, ছাত্রদল নেতা বেলাল হোসেন রাহাদ, গিয়াস উদ্দিন হৃদয়, মানবতার ডাক’র এএইচ রাসেল, পাঠকবন্ধুর নির্বাহী সদস্য দেলোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবী পরিবারের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেয়। সরকারি কলেজ, ফেনী ইউনিভার্সিটি ও ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়।
ফেনী সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে, আমরা ফেনী সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা, গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজার প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান গণহত্যা, মিসাইল হামলা, রাসায়নিক গ্যাস আক্রমণ এবং সীমাহীন সহিংসতার মুখে আমরা নীরব থাকতে পারি না। ২০২৫ সালের ৭ই এপ্রিল, সোমবার, আমরা পুরো বিশ্বের সাথে একাত্মতা পোষণ করে গে-াবাল স্ট্রাইক ফর গাজায় অংশ নিচ্ছি। ক্রমাগত বোমাবর্ষণ, অনাহার এবং বাকস্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে যে নিপীড়ন চলছে ফিলিস্তিনে, তা উপেক্ষা করা যায় না। এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সংকট নয়-এটি একটি গভীর নৈতিক সংকট। এখনই সময় সোশ্যাল মিডিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে একত্রিত হওয়ার, প্রতিবাদ করার, সংগঠিত হওয়ার এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
বিবৃতিতে তারা আরও উল্লেখ করে, আমরা গাজায় ইসরায়েলের পরিচালিত গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাই, পাশাপাশি নিন্দা জানাই যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য পরাশক্তিদের অকুন্ঠ সমর্থনেরও। একইসাথে, আমরা তীব্রভাবে নিন্দা জানাই সেইসব রাষ্ট্রের, বিশেষ করে আরব দেশগুলোর, যারা এই নির্মমতার সময় নীরব থেকেছে। তাদের নিষ্ক্রিয়তাই এই গণহত্যাকে অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা, ফেনী সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা, গাজার পাশে আছি। ৭ই এপ্রিল চলুন আমরা এক কণ্ঠে আওয়াজ তুলি ন্যায়বিচার, শান্তি এবং মানবতার পক্ষে।
এদিন একই ধরনের বিবৃতি দিয়ে সংহতি প্রকাশ করে ফেনী ইউনিভার্সিটি ও ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আপনার মতামত লিখুন